লক্ষ্মীপুরে মেঘনা নদীর ভাঙ্গন থেকে রামগতি ও কমলনগর উপজেলাকে রক্ষার্থে ৩২ শ’ কোটি টাকার প্রকল্প তৈরী করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই নদী শাসন ও ভাঙ্গন রোধের কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অবঃ) জাহিদ ফারুক।
গতকাল শুক্রবার সকালে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার মেঘনা নদীর ভাঙন
কবলিত এলাকা পরিদর্শ করে এ কথা জানান তিনি। কমলনগরের চর ফলকন ইউনিয়নের বাঘা বাজারে আয়োজিত এক পথ সভায় প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেন, নদীন শাসন ও ভাঙন রোধে সরকারের পক্ষ থেকে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। নদী শাসনের জন্য প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এটা ব্যয়বহুল প্রকল্প। বস্নক দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করতে হলে ছোট নদীতে প্রতি কি. মি. বাঁধে ৩০ কোটি এবং বড় নদীতে ৮০-৯০ কোটি টাকার মতো ব্যয় হবে। তড়িগড়ি করে বাঁধ দিলে যে কোন সময় আবার তা ভেঙ্গে যায়। তাই কারিগরি কমিটি পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে সিদ্ধান্ত দেয় কিভাবে বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। ফলে একটা প্রকল্প পাশ করতে অনেক সময় লাগে।
তিনি নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকার মানুষকে আস্বস্ত করে বলেন, আপনাদের কষ্ট এবং অনুভূতি আমি বুঝি। আমি এর আগেও (১২ এপ্রিল-২০১৯) এ এলাকার পরির্দশন করে গেছি। যে সব এলাকা দেখে গেছি ওইসব এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদী ভাঙ্গন রোধ করতে আমার আন্তরিকতার কোন ঘাটতি নাই। এ জন্য দু’ দুই বার এ এলাকায় এসেছি। নদী ভাঙন রোধ প্রকল্প পাশ হবে। আগামী বর্ষা আসার আগেই কাজ শুরু হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিকভাবে আমরা অগ্রসর হচ্ছি। করোনার কারণে অর্থনীতি অগ্রযাত্রা কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রচেষ্টায় আমরা এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছি। প্রধানমন্ত্রী নদী ভাঙন রোধের প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। তিনি সব সময় প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের চেষ্টা করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) আসনের সংসদ সদস্য ও বিকল্প ধারা মহাসচিব মেজর (অবঃ) আবদুল মান্নান বলেন, ‘নদী ভাঙার কারণে মানুষ ভিক্ষুক হয়ে যাচ্ছে। ভাঙনের কারণে এ দুই উপজেলার ৩ হাজার কোটি টাকার জমি এবং স্থাপনা বিলীন হয়ে গেছে। কিন্তু ১০ বছর আগে যদি ৩শ’ কোটি টাকা খরচ করে বাঁধ দেওয়া যেত তাহলে ভাঙন থেকে বাঁচানো যেত। নদীকে শাসন না করলে নদী তার ইচ্ছে মতো চলে। আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, আর এক ইঞ্চি মাটিও নদীতে ভাঙবে না। কিন্তু বাঁধ না তৈরী হওয়ায় দিন দিন কয়েকশ’ একর ভূমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। মানুষকে বাঁচাতে হবে। এ সরকার মানুষকে বাঁচাতে না পারলে আর কেউ পারবে না। নদী ভাঙন বন্ধ করতেই হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত বছর ইমাজেন্সী ফান্ড দিয়ে ভাঙন রোধের চেষ্টা চালানো হয়। ৩৭ কি. মি উপকূলীয় এলাকার মধ্যে ৩২ কি. মি. এলাকায় বাঁধ দিলে ভাঙন ঠেকানো যাবে। এরই মধ্যে ৫ কি. মি. এলাকায় বাঁধ তৈরী হয়েছে।’
সংক্ষিপ্ত পথ সভায় উপস্থিত ছিলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহা পরিচালক মাহফুজুর রহমান, লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পাল, পুলিশ সুপার এএইচএম কামরুজ্জামান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ, কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোবারক হোসেন, উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন বাপ্পি প্রমুখ।
কমলনগরের পথসভা শেষে প্রতিমন্ত্রী রামগতি উপজেলার মেঘনা নদীর উপকূলীয় এলাকা সোনালী গ্রাম, বালুর চর, ও চর আলগী পরিদর্শন করেন। এর আগে প্রতিমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যকে বহনকারী হেলিকপ্টার সকাল ১১ টায় দিকে কমলনগরের চর ফলকন ইউনিয়ন পরিষদের মাঠে অবতরণ করে। সেখানে প্রতিমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
Leave a Reply