রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু

  • আপডেট সময় : রবিবার, আগস্ট ২৪, ২০২৫
  • 193 পাঠক

রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার এবং প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় টেকসই সমাধানের পথ খুঁজতে কক্সবাজারে তিন দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু হয়েছে। ২৪ আগস্ট থেকে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত উখিয়ার ইনানীর সেনাবাহিনী পরিচালিত হোটেল বে-ওয়াচ মিলনায়তনে এই উচ্চপর্যায়ের আয়োজন অনুষ্ঠিত হবে।

‘টেকঅ্যাওয়ে টু দ্য হাই-লেভেল কনফারেন্স অন দ্য রোহিঙ্গা সিচুয়েশন’ শীর্ষক এই স্টেকহোল্ডারস ডায়ালগ যৌথভাবে আয়োজন করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও রোহিঙ্গা ইস্যু বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভের দপ্তর। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস।

জানা গেছে, মিয়ানমারের রাখাইনে সামরিক জান্তার নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০১৭ সালে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। আশ্রিত জীবনে বছর বছর বাড়ছে ভোগান্তি। অপরাধ, মাদক ও নানা সহিংস কর্মকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্থানীয়রা। খুন, অপহরণ, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি ও ইয়াবার দাপটে উখিয়া-টেকনাফের জনজীবন অতিষ্ঠ। এই পরিস্থিতিতে বহু প্রতীক্ষিত আন্তর্জাতিক সংলাপকে স্থানীয়রা দেখছেন প্রত্যাবাসন কার্যক্রম পুনরুজ্জীবনের এক নতুন সুযোগ হিসেবে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলনে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ, কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক সংস্থা, শিক্ষাবিদ ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। আশা করা হচ্ছে, অন্তত ৪০টি দেশের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গাদের মানবিক সংকট আন্তর্জাতিক ফোরামে তুলে ধরা অনেক কষ্টকর। এই সম্মেলনে রোহিঙ্গারা সরাসরি তাদের বক্তব্য তুলে ধরতে পারবেন। মানবিক সহায়তার পাশাপাশি রাখাইনে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করার বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। ২৪ ও ২৫ আগস্ট পাঁচটি কর্ম অধিবেশনে হবে মূল আলোচনা। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে মানবিক সহায়তা, নিরাপদ প্রত্যাবাসন ও টেকসই সমাধান। ২৬ আগস্ট অতিথিরা পরিদর্শন করবেন উখিয়া রোহিঙ্গা শিবির।

সূত্র বলছে, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে নিউইয়র্কে ১০৭ দেশের অংশগ্রহণে রোহিঙ্গা ইস্যুতে উচ্চপর্যায়ের একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। কক্সবাজারের এই আয়োজনকে সেই সম্মেলনের প্রস্তুতি সভা হিসেবে দেখছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়।

এদিকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সফরকে ঘিরে কক্সবাজারে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন বিশেষ নির্দেশনা জারি করেছে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অস্ত্র আইন ১৮৭৮-এর ধারা ১৭(ক) (১) অনুযায়ী জেলার সব বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রধারীকে নিজ নিজ থানায় অস্ত্র জমা দিতে হবে। নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে সাধারণ জনগণকে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সহযোগিতা করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

উখিয়ার স্থানীয় বাসিন্দা ও জেলা জজ আদালতের আইনজীবী এডভোকেট আব্দুল মান্নান বলেন, রোহিঙ্গা আসার পর আমাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে গেছে। এখন যদি আন্তর্জাতিক মহল কার্যকর পদক্ষেপ নেয়, তবে হয়তো শান্তি ফিরবে।

তিনি আরও বলেন, সম্মেলনে যদি সুনির্দিষ্ট সময়সীমা ও রোডম্যাপ বের হয়, তবে এটাই হবে সবচেয়ে বড় অর্জন।

স্থানীয়দের মতে, কক্সবাজারের আন্তর্জাতিক সম্মেলন ঘিরে কড়াকড়ি নিরাপত্তার পাশাপাশি আশা-প্রত্যাশার চাপও বাড়ছে। আট বছর ধরে স্থবির থাকা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এবার গতি পাবে কি না—সবটাই নির্ভর করছে এই সংলাপের সাফল্যের ওপর।

সামাজিক যোগাযোগ মধ্যমে শেয়ার করুন...

এ বিভাগের আরো খবর....

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *